AHMnewsTeam ::: কোরবানির আভিধানিক অর্থ হলো কাছে যাওয়া বা নৈকট্য অর্জন করা। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শরিয়তের বিধান অনুসারে নির্দিষ্ট পশু জবাই করা। প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব করা হয়েছে। ত্যাগের মহিমায় আবার এসেছে ঈদ উল আজহা। এই ঈদের মাহাত্ম কোরবানিতে। অর্থাৎ পশু কোরবানির মাধ্যমে। কোরবানি সহিহ করতে মাংস বন্টন ও বেশ কিছু নিয়ম জানা জরুরি। বিষয়গুলো হাদিস শরীফের আলোকে তুলে ধারা হয়েছে।
১. শরীকে কোরবানি করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা উচিত নয়।
২. কোরবানি গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই।
৩. কোরবানির গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে।
৪. কোরবানির গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয, তবে মুসলমান প্রধান্য আগে।
৫. জবাইকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারি দেওয়া যাবে।
৬. কোরবানির চামড়া কুরবানিদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি।
৭. কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি।
৮. এক কোরবানির পশুতে আকীকা, হজ্বের কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে।
৯. ঈদুল আজহার দিন সর্বপ্রথম নিজ কোরবানির গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কোরবানির গোশত খাওয়া সুন্নত। এই সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য।
১০. কোরবানির মৌসুমে অনেক মহাজন কোরবানির হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কোরবানিদাতার জন্য নিজ কুরবানির কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না।
১১. কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে।
১২. কোরবানির পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না।
১৩. কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে মোরগ কোরবানির করার প্রচলন আছে। এটি না জায়েয। কুরবানির দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয়, তবে কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না।
১৪. কোরবানির পশুর চামড়ার মালিক কুরবানিদাতা। সে ইচ্ছা করলে তা ব্যবহারও করতে পারে। সে যদি চামড়াটি দান করে দিতে চায় তবে বিক্রি না করে আস্ত দান করাই উত্তম।
১৫. কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করলে এর মূল্যের হকদার হয়ে যায় ফকির-মিসকিন তথা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত লোকজন। আর এদের মধ্যে আত্মীয়-স্বজনও দ্বীনদারগণ অগ্রাধিকার যোগ্য। কোরবানির মাংস সব সময় নিকটতম আত্নীয় ও আশপাশের অসহায় গরিব-দূঃখী প্রতিবেশিদের দেয়া উত্তম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন