বিশ্ব পরিচ্ছন্ন দিবসে আমরা কতোটা সচেতন। - AHM NEWS 24.COM

AHM NEWS 24.COM

First of all, visit to know the latest news...

Breaking

Post Top Ad

 

Ahmnews

শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

বিশ্ব পরিচ্ছন্ন দিবসে আমরা কতোটা সচেতন।

 


কিভাবে শুরু হলো বিশ্ব পরিচ্ছন্ন দিবস : বিশ্ব পরিচ্ছন্ন দিবস মূলত ২০০৮ সাল থেকে পালন করা হয়২০০৮ সালে ইস্তোনিয়ার প্রায় ৫০০০০ মানুষ মাত্র ৫ ঘন্টায় দেশটি পরিষ্কার করার মধ্যে দিয়ে দিনটার সূচনা ঘটে।এর মাত্র ১১ বছর পর এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরে যা প্রায় ১৮৭ টি দেশে পালন করা হয়ে থাকে। ২০১৮ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর  প্রায় ১৫৭টি দেশের ১৮ মিলিয়ন মানুষ মানব ইতিহাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবর্জনা সংগ্রহ করে।বর্তমানে প্রায় ১৮৭ টির মতো দেশের ২০ মিলিয়ন মানুষ এর সাথে সংযুক্ত আছে।আজকের এই দিনে হিন্দু,বোদ্ধ,খ্রিষ্টান,মুসলিম সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে আমাদের এর পৃথিবী নামক বাড়ি টাকে পরিষ্কার করে থাকে। ।আজকের এই দিনে আবার ও সারা পৃথিবীর বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী ও বেশকিছু সংগঠন একত্রিত হয়ে নদী,বীচ,সমুদ্র,রাস্তা,ও বন থেকে ময়লা সংগ্রহ করে পৃথিবীকে পরিষ্কার করবে।বিশ্ব পরিষ্কার দিবস একটি বড় ইভেন্ট যা Let's Do it world(LDIW) পরিচালনা করে থাকে।প্রায় প্রতিটি দেশে এর প্রতিনিধি আছে যারা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। LDIW)প্রায় ৫ টি মতবাদের উপর নির্ভর করে কাজ করে থাকে।সেগুলো হলো:cooperation,positivity,Leadership,technology,fun.

প্রতিটি দেশই প্রায় ময়লা আবর্জনা সমস্যায় জড়িত যা সরকারের পক্ষে  সমাধান করা অসম্ভব হয়ে থাকে।কোন কোন দেশে এটি ছোট সমস্যা হলেও কিছু কিছু দেশে এটি জীবন মরণ সমস্যা তাই এই দিনটি পালন করে পৃথিবীকে ময়লা মুক্ত করা হয়  এবং নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলতে উদ্বুদ্ধ করা হয়।

আমরা কিভাবে পরিবেশকে নোংরা করছি: আমাদের দেশে মানুষ রাস্তায় চলতে চলতে মুড়ি, বাদাম, বিস্কুট, চকলেট বা অন্য অনেক কিছুই খায় আর খাওয়া শেষ হওয়া মাত্রই খাবারের অবশিষ্টাংশ বা খোলস বা প্যাকেটগুলো বিন্দুমাত্র দ্বিধা  না করে রাস্তায় ফেলে দেয়।আমাদের দেশের তরুণ সমাজ প্রায় প্রতিদিন শতশত কোমল পানীয় পান করে থাকে এবং রাস্তায় যেখানে সেখানে ফেলে দেয় অনেককে তো দেখা যায় কোমল পানীয় বা পানি খাওয়া শেষে বোতল দিয়ে রাস্তায় ফুটবল খেলে এবং পরে তা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে চলে যায়।এছাড়াও আমরা প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই,নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য পলিথিন ব্যাগ বা প্লাস্টিক ব্যাগ এর উপর নির্ভলশীল।পলিথিন ব্যাগ দাম এ সস্তা হওয়ায় সব দোকানদার ৫ টাকার জিনিস কিনলেও পলিথিন দিয়ে থাকে যা আমরা যত্রতত্র ফেলে দিয়ে আমাদের চারপাশ নোংরা করে থাকি।এছাড়াও শপিং ব্যাগ,স্ট্র,ছেড়া জুতা এমন কি মেডিকেল মাস্ক এবং গ্লোবস যেখানে সেখানে ফেলে পরিবেশ কে নোংরা করছি।এমনকি ঔষুধ খাওয়া শেষে ঔষুধ এর বোতল ও পাতা যেখানে সেখানে ফেলে পরিবেশ টা নোংরা করছি। বিশ্বব্যাংকের দেওয়া এক তথ্যমতে, ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ সঠিক নিয়মে ডাম্পিং করা হয়, ২০ ভাগ সরকারি-বেসরকারি সংস্থা দ্বারা পুনঃচক্রায়ন করা হয়। আর  অবশিষ্ট অংশ স্থানীয় জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে।যা আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে।আমাদের দেশের রাস্তায় রাস্তায় ডাস্টবিন থাকলেও কেউ তা ব্যবহার না করে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলছে ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

পরিবেশ নোংরা করার কারণে যেসব ক্ষতি হচ্ছে:প্রতিদিন যেখানে সেখানে ময়লা ফেলার কারণে পরিবেশ যেমন দূষিত হচ্ছে ঠিক তেমনি মানুষ ও এই দূষণ এর শিকার হচ্ছে।প্রতিনিয়ত চারপাশে ফেলে দেওয়া চিপ্সের প্যাকেট,প্লাস্টিক বোতল,পলিথিন ইত্যাদির কারণে এডিস মশা জন্ম নিচ্ছে।ফলে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের দেশে প্রতিবছর ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারন করে এবং এর কারণে কয়েকশ মানুষ প্রাণ হারিয়ে থাকে।এমন কি ড্রেনে এসব জিনিস থাকার ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে ফলে সেই পানি পায়ে লাগায় নতুন নতুন অসুখের দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য যে সুন্দর পরিবেশ দরকার তা পাচ্ছেনা ফলে স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।নোংরা পরিবেশের কারণে শুধুমাত্র প্রতিবছর প্রায় ৫ মিলিয়ন শিশু অসুস্থতা জনিত কারণে মৃত্যু বরন করে।এর মধ্যে শুধুমাত্র মালেরিয়ার কারনে ১ মিলিয়ন এবং ডেঙ্গুর কারণে প্রায় ১০ হাজার শিশু প্রতিবছর মারা যায়।এছাড়াও পরিবেশ নোংরা করার ফলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারণে দিন দিন ব্রংকাইটিস,হাঁপানি,নিউমোনিয়া ও এ্যাজমার মতো অসুখ যেন বেড়েই চলেছে।


আবার অনেক কে দেখা যায় বাসার ছাদ থেকে ময়লা নিচে ফেলে যার ফলে দূর্গন্ধের সৃষ্টি হয় এবং পথচারীদের অসুবিধার সৃষ্টি হয়।পরিবেশ নোংরা হওয়ার একটি অন্যতম কারণ হলো প্লাস্টিক দূষণ।প্রতিবছর প্লাস্টিক দূষণের কারণে মিলিয়ন মিলিয়ন স্থলজ ও জলজ প্রানী মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।কলকারখানার বিভিন্ন বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলার কারণে মাছ বিভিন্ন জলজ প্রানী মারা যাচ্ছে ও নদী তার স্বাভাবিক ধারা হারিয়ে ফেলছে।বুড়িগঙ্গা নদী হলো তার অন্যতম উদাহরণ।যেই নদীর পানি পান করা যেত সেই নদীর পানি আজ বিষাক্ত ।পৃথিবীতে প্রতি মূহর্তে কোন না কোন স্থানে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল,পলিথিন,চিপসের প্যাকেট আর স্ট্র এর শেষ ঠিকানা হচ্ছে সমুদ্র।২০১৫ সাল নাগাদ, পৃথিবীতে ৬.৩ বিলিয়ন প্লাস্টিক পণ্য তৈরি করা হয়েছে। ভয়ংকর হলেও সত্য যে, এর মাত্র ৯ শতাংশকে পুনরায় ব্যবহার করা হয়েছে, ১২ শতাংশ পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে আর বাকি ৭৯ শতাংশই পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশে জমা আছে।এই জমা থাকা প্লাস্টিক কোন না কোনভাবে সমুদ্রে এসে পড়ছে।সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ এর কারণে সালোকসংশ্লেষণ যেমন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে ঠিক তেমনি সামুদ্রিক প্রানীদের স্বাভাবিক চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।তাছাড়াও সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন প্রাণীর পেটে প্লাস্টিক এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে যা খাদ্যশৃংখল এর মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে ও ক্যান্সার এর মতো মারাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি করছে।শুধু ২০১৬ সালেই ১১০ বিলিয়ন প্লাস্টিক বোতল বানিয়েছে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান কোমল পানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোকা-কোলা। আর এই বোতলের বেশিরভাগই উন্মুক্তভাবে পরিবেশে পরিত্যাগ করেছেন ভোক্তারা।যার শেষ ঠিকানা হলো সমুদ্র।ফলে সামুদ্রিক প্রাণীগুলো হুমকির মুখে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছেআর এভাবেই প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ সহ সকল প্রাণী

পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে আমাদের করণীয় :নিজের দেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সবচেয়ে  প্রয়োজনীয় জিনিসটা হলো আপনার আমার সচেতনতা।কথায় আছে দশের লাঠি একের বোঝা তাই সবাইকে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।

আপনার আমার সবার বাসাতেই ময়লা হয়। তাই প্রয়োজন নিজের আশেপাশে আগে পরিষ্কার রাখা, নিয়মিত পরিষ্কার করে অনেকেই সেই ময়লাগুলো নিয়ে যেখানে সেখানে ফেলে দেই। এমনটা না করে একটু কষ্ট করে ডাস্ট বিনে ময়লা ফেললে কিন্তু আশেপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন থাকে। পরিবেশ পরিষ্কার রাখার সুবিধার্থে এবং নগরের পরিষ্কার পরিছন্নতা রক্ষার্থে প্রায় কয়েক হাজার কর্মী নিয়জিত আছে ডাস্টবিনের ময়লা নিয়ে যাওয়ার জন্য।

আশেপাশে যদি ডাস্টবিন না থাকে তাহলে মাটিতে একটা গর্ত খুঁড়ে তার ভেতর ময়লা ফেলে গর্তটি চাপা দিয়ে দিতে হবে এতে করে দূর্গন্ধ ও রোগবালাই ছড়াবে না।

বাসার বা অফিসের ময়লা সাময়িকভাবে রাখার জন্য একটি পাত্র ব্যবহার করতে হবে, চাইলে ময়লা ফেলার জন্য ব্যাগ ও  ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়াও 

এলাকায় ছোট ছোট ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিন রাখতে হবে যাতে দূর্গন্ধ না ছড়াতে পারে।কেননা  একটি ডাস্টবিন থাকলে সেখানে অনেক ময়লা জমে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিছন্নতা তো বজায় থাকেই না, উলটো পরিবেশ দূষিত হয়ে যায়।তাছাড়া ও চারপাশ যেহেতু বেশির ভাগ ক্ষেতেই  নোংরা হয় প্লাস্টিক আর পলিথিন,শপিং ব্যাগ দ্বারা তাই পলিথিন আর প্লাস্টিক এর ব্যবহার কমাতে হবে।বাজার করার জন্য চট বা মশারীর কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। আর বাজারের ব্যাগ ফেলে না দিয়ে পরিষ্কার করে পুনরায়  ব্যবহার করতে হবে।আমরা অনেকেই খাবার নষ্ট করে যেখানে সেখানে ফেলি এমনটা না করে

খাবার বেঁচে গেলে সেগুলোকে যেখানে সেখানে ফেলে না দিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করতে হবে।এতে করে মাটির নিচে রেখে দিলে তা জৈব সারের ন্যায় কাজ করবে।

যেখানে সেখানে মলমুত্র ত্যাগ না করে টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। বাসে বা পাবলিক যানবাহনে চলার সময় আমরা যেখানে সেখানে যা তা ফেলে দেয় এমন না করে সেই ব্যবহৃত জিনিস নিজের সাথে করে নিয়ে এসে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেললে পরিবেশ পরিষ্কার থাকে।তাই একটা দিয়াশলাই এর কাঠি থেকে শুরু করে সব কিছু নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে।

আমরা সবাই চাই একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেশের।তাই যেখানে-সেখানে ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করা, ময়লা-আবর্জনার কারণে সৃষ্ট সমস্যাবলী মানুষকে জানানোই হবে আমাদের প্রধান কাজ। ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা একটি অভ্যাস, এই অভ্যাসটি সবার মাঝে সৃষ্টি করতে হবে।আমাদের একার পক্ষে সবকিছু পরিষ্কার রাখা সম্ভব না সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এবং জনমনে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।দেশকে পরিষ্কার রাখতে বেশকিছু সেচ্ছাসেবী কাজ করে থাকে তাদের সাথে কাজ করতে হবে।আমরা যুবক সমাজ প্রায় সবাই বাসায় গিয়ে পড়াই।সেই সুবাদে একটি করে পরিবার কে সচেতন করতে পারি

পরিশেষে একটা কথাই,আসুন আমরা নিজে নিজে সচেতন হয়ে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলে পরিবেশ টাকে সুন্দর করে গড়ে তুলি।


লিখেছেন : মো: ফারেশ হোসেন(পাইলট)

ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস ট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad


Pages