AHMnewsTeam ::: সান্তাহার পৌরসভার দুই বারের নির্বাচিত মেয়র তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু ৩য় বার ভোটের লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিয়েছেন। নির্বাচিত হয়ে 'হ্যাট্রিক করে' তৃতীয় বারের মতো পৌরবাসীর সেবা করতে চান তিনি। গড়তে চান ডিজিটাল ও মডেল পৌরসভা।
এদিকে তফসিল ঘোষণা না হলেও আগাম জানান দিচ্ছেন প্রার্থীরা। গোটা পৌরসভা এলাকার পাড়া-মহল্লায়, অলি-গলিতে, চায়ের দোকানে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা কোন দল থেকে কে হচ্ছেন মেয়র প্রার্থী। ইতিমধ্যে অনেকে শুরু করেছেন তদবির। নির্বাচনী হাওয়ায় বেশ উত্তপ্ত সান্তাহার পৌরসভার সর্বত্র। তবে দুই বারের নির্বাচিত মেয়র ভুট্টু আশা করছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাকে আবারও মনোনয়ন দিবেন। আশা রেখেছেন এবারও জয়ী হওয়ার। তিনি তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিয়েছেন নানা পরিকল্পনা। তিনি আশা করছেন তার কাজ দেখে পৌরসভাবাসী আবারও তাকে সমর্থন দিবে, ভোট দিয়ে করবে জয়ী। সকলকে সাথে নিয়ে তিনি করবেন পৌরসভার অসমাপ্ত কাজ। তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু সান্তাহার পৌর শহরের প্রবাসী পাড়ায় ১৯৬৮ সালের ১ জানুয়ারিতে জম্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম মৃত তাজের উদ্দিন এবং মায়ের নাম জাহেদা বেগম। তার শৈশব ও কৈশর কেটেছে সান্তাহার শহরে। এক সন্তানের জনক তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু ছাত্র জীবন থেকেই শহীদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণীত হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতি মনে প্রাণে ধারণ করেন। তবে তিনি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেননি কর্মের জন্য বিদেশে পাড়ি দেওয়ার কারণে। বিদেশে থাকলেও তিনি সর্বদা খোঁজ খবর রাখতেন মাতৃভূমি সান্তাহারবাসীর ও বুকে ধারণ করা বিএনপির রাজনীতি সম্পর্কে। তাইতো তিনি দেশে এসে শুরু করেন ব্যবসা এবং জড়িয়ে পড়েন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে।
ভুট্টু দীর্ঘদিন সান্তাহার পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি সান্তাহার পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। পাশাপাশি তিনি সান্তাহার শাখার বাস মালিক সমিতি ও বণিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ক্লিন ইমেজের হওয়ায় তিনি ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি বিএনপির সমর্থন নিয়ে প্রথম বারের মত সান্তাহার পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। এর পর ২য় বারের মত মেয়র নির্বাচিত হন ২০১৫ সালে ৩০ডিসেম্বর। বলা যায়, পেশায় একজন সফল ব্যবসায়ী; নেশা সমাজ সেবা করা। এমনটাই বলছেন এলাকাবাসী। আবারও বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষ পাবেন কিনা এ বিষয়ে মেয়র বলেন, ভালো কাজের পাশাপাশি সমালোচনাও থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমি বলবোনা যে, পৌরসভা ও পৌরবাসীর জন্য সকল কাজ সমাপ্ত করতে পেরেছি। কিছু কাজ অসমাপ্ত আছে। পৌরবাসী হিসেবে তাদের চাহিদা থাকে অনেক। আর মেয়র হিসেবে আমাকেই জবাবদীহি করতে হবে। তাই আমি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। আপনারা দেখেছেন আমি গত ১০ বছর পৌরবাসীর সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থেকে কাজ করেছি, এখনও করছি এবং যেটুকু সময় আছে পৌরবাসীর পাশে থেকে কাজ করে যাব। ভুট্টু বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের ভালোবাসার কারণেই দুই বার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। প্রতিটি ওয়ার্ডের ভোটাররা ভোট দিয়ে আমাকে জয়ী করেছেন’। যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন তারাও পৌরসভার নাগরিক, যার ভোট দেননি তারাও। তাই আগামীতে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডকে একটি মডেল ওয়ার্ডে পরিণত করতে চাই।
তিনি বলেন, সান্তাহারে পানির সমস্যা সমাধানে ওভারহেড পানির ট্যাংক নির্মাণ, পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা, রাস্তা-ঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নত করন, বস্তিবাসীর জীবন-মান বৃদ্ধিসহ সকল গুরুত্বপূর্ন সেবা প্রদান করেছি। বিশেষ করে রাস্তা, নিষ্কাশন নালা এবং সড়ক বাতি এসব যেন সর্বদা ঠিক থাকে সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। মেয়র হিসেবে গত দশ বছরে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করেছি। এছাড়াও সাবেক মেয়র ও কাউন্সিলরদের বেতন ভাতা ও পরিশোধ করেছি। সেই সঙ্গে পরিশোধ করেছি বকেয়া বেতনও। মশক নিধনে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি এবং আগামীতেও করবো। এ ছাড়া শহরের সকল ওয়ার্ডে ভ্রাম্যমান ডাষ্টবিন স্থাপন, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। চাঁদাবাজি, মাদক বিক্রি, ছিনতাই প্রতিরোধ, যৌন হয়রানি, ইভটিজিং এবং শিক্ষার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে সহযোগিতা করেছি এবং আগামীতেও করবো। এ পৌরসভার সব মানুষের পাশে থাকা এবং সব এলাকার উন্নয়ন করাই আমার দ্বায়িত্ব। আমি সান্তাহার পৌরসভাকে তৃতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করেছি। আমার বিশ্বাস, পৌরবাসী এবারও আমাকে মেয়র নির্বাচিত করবেন। আগামী দিনে অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করে সবাইকে নিয়ে ঐতিহ্যবাহী সান্তাহারকে একটা ডিজিটাল ও মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তিনি বলেন, সান্তাহারে একটি ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জংশন ষ্টেশন হওয়ায় এ পৌরসভাটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এলাকা। তাই এ পৌরসভার উন্নয়নে নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। পৌরসভার সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সহজ করতে নানামুখী কার্যক্রম হাতে নিতে চান এ বিএনপি নেতা। তিনি আরও বলেন, যারা আগামী দিনে এদেশে নেতৃত্ব দেবেন, সেই যুবসমাজ যাতে মাদকের ছোবলে ধ্বংস না হন, সেদিকে আমাদের সকলকে নজর রাখতে হবে। আমি চাই না কোনো মেধাবী সন্তান যেন মাদকের অন্ধকার জগতে গিয়ে তার পরিবার তথা সমাজকে কলুষিত করুক। তাই আমি সকলকে নিয়ে এ পৌরসভাকে মাদকমুক্ত পৌরসভা গড়ারও চেষ্টা করবো। তবে সবসময় দল ও জনগণের পাশে থাকতে চান বলে জানান এই বিএনপি নেতা।
১৯৮৮ সালের মে মাসে ১০ দশমিক ৫৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে যাত্রা শুরু করা সান্তাহার পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয় ২০১৭ সালে। এই পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৬ হাজার ১৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ হাজার ৮০৪ জন এবং নারী ভোটার ১৩ হাজার ৩৬৮ জন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন